স্বদেশ ডেস্ক:
দেশে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও বিপরীত চিত্র প্রতিবেশী দেশ ভারতে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তারপরও চলতি সপ্তাহে বেশ কয়েকজন ব্যাংকার আইটি খাতের একটি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে দলবেঁধে মুম্বাই সফরে যাচ্ছেন। দেশটিতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে ব্যাংকারদের এ সফরকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখছেন ব্যাংক খাতের অনেকেই। তারা বলছেন, বিদেশে ভ্রমণের সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় কেউ স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। তাই এ ধরনের সফরের ফলে কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে ব্যাংকপাড়ায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ব্যাংকারদের বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা চেয়েছেন তারা।
গত মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ব্যাংকারদেরও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পবিত্র হজ পালন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সুপারিশ থাকা সাপেক্ষে জরুরি চিকিৎসা, ব্যাংকে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিজ দেশে গমন ও বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশের শাখায় কর্মরত কর্মকর্তাদের প্রধান কার্যালয়ে গমন এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত রাখা হয়। এ ছাড়া বিদেশি আয়োজক সংস্থার সম্পূর্ণ অর্থায়নে পরিচালিত প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার ও কর্মশালায় বিদেশে যাওয়ারও সুযোগ রাখা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় করোনা সংক্রমণপ্রবণ কোনো দেশে বা সেই দেশের সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভ্রমণ করা যাবে কি, যাবে না সে বিষয়ে কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমান্বয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দেশটিতে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত ১০ জুন ভারতে করোনায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ওইদিন নতুন আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৩২৯ জন; যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। দৈনিক সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। গত ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে নতুন আক্রান্ত হন ৩ হাজার ৮১ জন। এর মধ্যে শুধু মুম্বাইয়েই নতুন আক্রান্ত হন ১ হাজার ৯৫৬ জন। মহারাষ্ট্রের পরই রয়েছে কেরালা, যেখানে ওইদিন আক্রান্ত হন ২ হাজার ৪১৫ জন।
জানা যায়, ভারতে করোনা সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও অবাধ যাতায়াত বেড়েছে বাংলাদেশিদের। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে যখন খুশি তখন দেশটিতে ব্যক্তিগত ভ্রমণ করছেন অনেকেই। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই দেশের ব্যাংকাররাও। এতে বাংলাদেশেও ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়েকজন ব্যাংকার আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ প্রয়োজনে বিদেশে ভ্রমণের সুযোগ রেখেছে এটা অবশ্যই ভালো দিক। কিন্তু করোনা সংক্রমণ দেশ বা এলাকায় আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি। ফলে বিশেষ প্রয়োজনে বা সভা-সেমিনারে নামে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সংক্রমণের দিকটি বিবেচনায় নিচ্ছে না। এতে ব্যাংকপাড়ায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, ভারতের সুইফট সলিউশন সার্ভিস প্রোভাইডার নেলিটো সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড ১৭ জুন তাদের কাস্টমার তথা গ্রাহকদের জন্য গ্লোবাল কাস্টমার মিট নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মুম্বাই শহরে। এটি সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনের (সুইফট) অনুমোদিতে প্রতিষ্ঠান। সূত্র বলছে, নেলিটোর ওই আমন্ত্রণের পরই বেসরকারি চারটি ব্যাংক থেকে ৪ জন কর্মকর্তাকে ওই অনুষ্ঠানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা যায়, যেসব ব্যাংক সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তাদের নিয়ে সুইফট মেম্বার ও ইউজার গ্রুপ অব বাংলাদেশ নামে (এসএমইউজিবি) দেশে একটি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের নির্বাহী কমিটি ও টেকনিক্যাল কমিটিতে আছেন ব্যাংকের এমডি, এএমডি ও ডিএমডি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য ও আইটি বিভাগের কর্মকর্তারা। মূলত এসএমইউজিবির নির্বাহী কমিটি ও টেকনিক্যাল কমিটিতে যারা আছেন, তাদের মধ্য থেকে ৪-৫ জনকে ওই প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নেলিটো। এরপরই এসএমইউজিবি তাদের কমিটির মধ্য থেকে চারজন ব্যাংকারের নাম চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠায়। সম্প্রতি ব্যাংকগুলো থেকে ওই কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তারা হলেন স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশনের প্রধান মো. আকমল হোসেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (আইসিটি) মাহবুব আল-হাসান, সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (সুইফট ও আরটিজিএস) কাজী মো. এরফানুল হক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (টেকনোলজি বিভাগ) মো. আবুল বাশার। এসএমইউজিবি বলছে, এ ধরনের প্রোগ্রাম ব্যাংকারদের আইটি সংক্রান্ত জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, যা দিয়ে তারা দেশের সুইফট কমিউনিটির জন্য অবদান রাখতে পারবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এ ধরনের প্রোগ্রাম আয়োজন করার মূল উদ্দেশ্যই থাকে নিজেদের সেবা বিক্রি করা। তা না হলে শুধু বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকেই কেন এ ধরনের প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ জানানো হবে।